ইকবাল হোসেন তালুকদার, নবীগঞ্জ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাকে কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছেই। এতে বদলে যাচ্ছে নদীর প্রকৃতি, দেখা দিচ্ছে ভাঙন। আর হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি।
কুশিয়ারা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনে নদী তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট হারাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে গতিপথ। উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে ড্রেজার মেশিন, পাইপসহ যাবতীয় সরঞ্জাম জব্দ করলেও তারা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
বালু উত্তোলনের ফলে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কিছু এলাকায় ইতোমধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম গ্যাস ফিল্ডের নর্থ প্যাড। যে কোন মুহূর্তে নর্থ প্যাড নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যেথে পারে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে উপজেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা গ্রামের মাহমদ আলী ও নুরুল এবং জগন্নাথপুরের সোহেল গংরা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই দীঘলবাক ইউনিয়নের কসবা গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। চক্রটি দীঘলবাক ইউনিয়নের বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের ২শ মিটার দূরত্ব থেকে কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে দুটি ড্রেজার মেশিন দ্বারা প্রায় তিন কিলোমিটার দুরে কসবা নতুন বাজার সংলগ্ন সরকারি বিল ও খাল ভরাট করে বালু মজুদ করার এরিয়া তৈরি করে সেখানে প্রায় ২০ লাখ ঘনফুট বালু ইতিমধ্যে উত্তোলন করেছে।
জেগে উঠা কুশিয়ারা নদীর তীরের চর থেকে বেপরোয়া বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। আশংকা করা হচ্ছে কসবা, নতুন কসবা, চরগাঁও, দীঘলবাকসহ নদীর তীরবর্তী এসব গ্রামে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। বালুখেকো প্রভাবশালী এই চক্রটির বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ড্রেজার দিয়ে নদীর তীর থেকে এভাবে বালু উত্তোলন করলে আমাদের বসতবাড়ি নদীর ভাঙ্গনের শিকার হবে। তারা অনেক শক্তিশালী মানুষ আমরা বাঁধা দিলে মামলা করে হয়রানি করার হুমকি দেয়া হয়।
খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার ঘটনাস্থলে গিয়ে উল্লেখিত তিন জনকে না পেয়ে দুটি ড্রেজার, পাইপ ও বালু বহনকারী নৌকা জব্দ করে তিন জনকে অফিসে আসার এবং সে পর্যন্ত বালু উত্তোলন না করার নির্দেশ দিয়ে আসেন।
শুক্রবার (১০ মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসিল্যান্ডের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই চক্রটি রাতের আধারে ও দিনে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বলেন, ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদেরকে অফিসে আসতে বলেছি। ড্রেজার মেশিন ও পাইপ জব্দ করা হয়েছে। এরপরও যদি আইন অমান্য করে বালু উত্তোলন করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।